“রাজনীতি” শব্দটি শুনলেই আমাদের অনেকের মনে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কেউ একে দেখেন দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে, আবার কেউ দেখেন ক্ষমতা দখলের নোংরা খেলা হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে, রাজনীতি হলো একটি সমাজের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় এবং জনগণের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তবে এই রাজনীতির স্বরূপ ও প্রয়োগ নিয়েই যত আলোচনা ও বিতর্ক।
রাজনীতির অপরিহার্যতা
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একটি সুশৃঙ্খল সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। আইন প্রণয়ন, দেশের নিরাপত্তা বিধান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ – এই সবকিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। একটি সুস্থ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই রাজনীতিকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, বরং এর সঠিক চর্চা নিশ্চিত করাই কাম্য।
বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপট
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সময়ে “রাজনীতি” শব্দটি প্রায়শই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে একাকার হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জনসেবার পরিবর্তে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ হাসিল করাই কিছু রাজনীতিবিদের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে এবং এর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে, যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।
আদর্শ রাজনীতির স্বরূপ
আদর্শ রাজনীতি হওয়া উচিত জনকল্যাণমুখী। যেখানে নীতি-নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রাধান্য থাকবে। নেতা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে, যারা দেশের স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেবেন। এমন রাজনীতিতে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে, গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানানো হবে এবং সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নই হবে এর মূল লক্ষ্য।
নাগরিকের সক্রিয় ভূমিকা
একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ভোট দিয়েই নাগরিকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও উদ্দেশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করা, সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা এবং ভুল কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করা – এ সবই সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। নাগরিকরা যত বেশি সচেতন ও সক্রিয় হবেন, রাজনীতি ততই জনমুখী হতে বাধ্য হবে।
তরুণ প্রজন্মের দায়বদ্ধতা
দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে তরুণ প্রজন্মের ওপর নির্ভরশীল। তাই রাজনীতিতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তাদের নতুন চিন্তা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সততা রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। প্রথাগত নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তরুণদের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখা উচিত। তাদের হাত ধরেই একটি পরিচ্ছন্ন ও আদর্শ রাজনৈতিক ধারার সূচনা হতে পারে।
উপসংহার
রাজনীতি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এর সদ্ব্যবহার যেমন দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে, তেমনই এর অপব্যবহার দেশকে ধ্বংসের পথেও ঠেলে দিতে পারে। তাই ব্যক্তি, দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনীতির গুণগত মান উন্নয়ন অপরিহার্য। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণে, রাজনীতি যখন সত্যিকারের জনকল্যাণের মাধ্যমে পরিণত হবে, তখনই একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধशाली সমাজ গঠন সম্ভব হবে।