বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি জাতীয় দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর, যেখানে অকালে ঝরে যায় বহু অমূল্য প্রাণ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও অনেকে, যা তাদের পরিবারকে ঠেলে দেয় চরম অনিশ্চয়তার দিকে। এই মৃত্যুর মিছিল যেন থামার নয়।
সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের অদক্ষতা ও মাদকাসক্তি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, রাস্তার বেহাল দশা, ট্রাফিক আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব – এ সবই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চালকরা দীর্ঘক্ষণ একটানা গাড়ি চালানোর ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, যা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়া, পথচারীদের অসচেতনতা এবং নিয়ম না মেনে রাস্তা পারাপারও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে অবাধে, যা দেখার যেন কেউ নেই।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। প্রথমত, চালকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ এবং তাদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করতে হবে। নিয়মিত যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট দ্রুত সংস্কার করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে সতর্কতামূলক চিহ্ন স্থাপন করা প্রয়োজন। পরিবহন মালিকদেরও মুনাফার চেয়ে জীবনের মূল্যকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
পাশাপাশি, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পথচারী এবং যাত্রী উভয়কেই তাদের নিজেদের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একটি জীবন কেড়ে নেয় না, বরং একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় এবং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী এবং পথচারী – সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়, সেই লক্ষ্যে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।