বর্তমান বিশ্বে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবেশ দূষণ। শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আমাদের চারপাশের বাতাস, পানি ও মাটি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্য এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অশনিসংকেত।
বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হলো কলকারখানার অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়া, যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাস এবং অসংখ্য ইটভাটার কালো ধোঁয়া। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে অগণিত মানুষ। অন্যদিকে, শিল্পবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়গুলো দূষিত হয়ে মাছ ও জলজ প্রাণের মৃত্যু ঘটাচ্ছে।
সুপেয় পানির সংকট তীব্রতর হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে এবং খাদ্যশৃঙ্খলে বিষাক্ত উপাদান প্রবেশ করছে। শব্দদূষণও মানসিক চাপ, অস্থিরতা ও শ্রবণশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যা তৈরি করছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এখনই কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পকারখানাগুলোকে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনে বাধ্য করতে হবে এবং নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে দ্রুত ঝুঁকতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কঠোরভাবে সীমিত করে পরিবেশবান্ধব বিকল্পের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যা বায়ুদূষণ কমাতে এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক।
পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করে, যেমন – আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ করা, গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়া, তাহলে সম্মিলিতভাবে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী আমাদের একমাত্র আবাসস্থল। একে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। পরিবেশ দূষণ রোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে না হাঁটলে আমাদের অস্তিত্বই সংকটের মুখে পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।