গুম তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা: ভয়াবহ চিত্র ও ‘হরর মিউজিয়ামের’ প্রস্তাব

LinkedIn
Twitter
Facebook
Telegram
WhatsApp
Email
গুম তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা ভয়াবহ চিত্র ও ‘হরর মিউজিয়ামের’ প্রস্তাব

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন তাদের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান, বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এসময় কমিশনের সদস্য নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই প্রতিবেদনটি দ্রুত ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে, কারণ এটি নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপীও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ঘটনার ভয়াবহতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! আমাদের সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।” তিনি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন, যেখানে তিন ফুট বাই তিন ফুট সেলের মতো বন্দিশালায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে রাখার নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।

বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোনও প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।

অধ্যাপক ইউনূস কমিশন সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রতিবেদনের আশু করণীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পড়ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে, যাতে সরকার স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

এসময় কমিশনের একজন সদস্য প্রধান উপদেষ্টাকে জানান যে, ঘটনার ভয়াবহতায় জড়িত অনেক কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যক্তিরা অনুশোচনা বোধ করছেন এবং আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দুজন অফিসার এমনকি লিখিতভাবে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন, যা গণভবনে পাওয়া গেছে এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এই চিঠির কথা স্বীকারও করেছিলেন।

কমিশন সদস্যরা জানান, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অভিযোগের মোট সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও তিন শতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

কমিশন প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত তাদের ব্যাংক হিসাব সচল রাখতে পারে, সে বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে কেউ সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই আইন সংশোধন করে সময়সীমা পাঁচ বছর করার জন্য তিনি সুপারিশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশনকে করণীয় জানাতে পরামর্শ দেন।

কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা ভয়-ভীতি, নানান রকম হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশের মানুষের জন্য আপনারা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে যারা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে আপনারা তাদের অনুপ্রেরণা।”

বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।

আরও পড়ুন