জলবায়ু পরিবর্তন: আর কতদিন এই প্রাণঘাতী নীরবতা?

LinkedIn
Twitter
Facebook
Telegram
WhatsApp
Email
The Clock Is Ticking: Our Shared Climate Change Responsibility

সূচিপত্র

জলবায়ু পরিবর্তন আজ আর কোনো তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়, এটি আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে এক নির্মম বাস্তবতারূপে। পৃথিবী জুড়ে এর ভয়াবহ প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি প্রতিদিন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রাণঘাতী নীরবতা বিরাজ করছে। এই নীরবতা ভাঙার সময় কি এখনও আসেনি?

নীরবতার নেপথ্যে

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এই ব্যাপক নীরবতার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, অনেকেই এই সমস্যার গভীরতা এবং আশু বিপদ সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন। দ্বিতীয়ত, দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা ও ব্যস্ততায় এই দীর্ঘমেয়াদী সংকট অনেকের কাছেই গৌণ মনে হয়। এছাড়া, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও কর্পোরেট সংস্থা তাদের ব্যবসায়িক লাভের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে লঘু করে দেখানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বিত পদক্ষেপের ঘাটতিও এই নীরবতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোনও প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাস

আমাদের দেশ, বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন ভয়াবহ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি (যেমন – সিডর, আইলা, আমফান), অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মতো ঘটনাগুলো এখন আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্গী। সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক ঢাল আজ বিপন্ন। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে, পানীয় জলের সংকট তীব্র হচ্ছে। এই প্রভাবগুলো উপেক্ষা করার আর কোনো সুযোগ নেই।

দায় কার, সমষ্টিগত না ব্যক্তিগত?

জলবায়ু পরিবর্তনের দায় এককভাবে কারো উপর চাপানো কঠিন। উন্নত বিশ্ব তাদের শিল্পায়নের মাধ্যমে বিগত শতকগুলোতে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে, তাই তাদের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সরকার, শিল্প সংস্থা এবং ব্যক্তি – প্রত্যেকেরই ভূমিকা রয়েছে। আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কতটা সচেষ্ট? আমরা কি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারছি? ব্যক্তি হিসেবে আমরা কি আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নগুলো আমাদের নিজেদেরকেই করতে হবে।

উত্তরণের পথ: এখনই পদক্ষেপ

নীরবতা ভেঙে এখনই সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও তা মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে জানাতে হবে। সরকারকে আরও কঠোর নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। শিল্প-কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত তথা বাধ্য করতে হবে।

নীরবতা ভাঙার এখনই সময়

জলবায়ু পরিবর্তন কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের সংকট। এই সংকট মোকাবিলায় যদি আমরা এখনও নীরব থাকি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব এই নীরবতা ভেঙে সোচ্চার হওয়া। আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরই পারে নীতিনির্ধারকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং পৃথিবীকে বাঁচানোর উদ্যোগে গতি আনতে। তাই, আর এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে, আসুন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আমাদের আর নীরব থাকার সুযোগ নেই। এই নীরবতা আমাদের নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আত্মঘাতী। এখনই সময় কথা বলার, কাজ করার এবং পৃথিবীকে বাঁচানোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শামিল হওয়ার। আমাদের কণ্ঠস্বর যত জোরালো হবে, এই সংকট থেকে উত্তরণের পথও তত প্রশস্ত হবে।

বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন। dailyalo.com এর কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ নয়।

আরও পড়ুন