বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়, যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক ও অসহনীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থেকে কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থীসহ সকল স্তরের নাগরিকদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, যার অর্থনৈতিক ক্ষতিও বিপুল। যানজটের কারণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণও বাড়ছে। এই সমস্যা নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং শহরের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
যানজটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাধিক্য, গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা ও নিম্নমান, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, এবং রাস্তার ওপর অবৈধ পার্কিং ও দখল। এছাড়াও, বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি এবং রাস্তার ধারে হাটবাজার বসাও যানজট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। চালকদের অদক্ষতা ও নিয়ম না মানার মানসিকতাও যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। প্রথমত, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। উন্নতমানের ও পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস নামানো, বাসগুলোর জন্য আলাদা লেন তৈরি করা এবং সমন্বিত রুট নেটওয়ার্ক চালু করা জরুরি। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে সেগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বৃদ্ধি, পার্কিং চার্জ বাড়ানো এবং ‘ভেহিক্যাল কোটা সিস্টেম’ চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। অটোমেটেড সিগন্যাল সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-কলেজ ও অফিসের সময়সূচিতে ভিন্নতা এনে পিক আওয়ারে রাস্তার ওপর চাপ কমানো যেতে পারে। বিকেন্দ্রীকরণ এবং ঢাকার বাইরে মানসম্মত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেও রাজধানীর ওপর জনসংখ্যার চাপ কমানো সম্ভব। যানজট নিরসনে শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই জাতীয় সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে এবং নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে।