সিলেটে অব্যাহত ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা সহ বিভিন্ন নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জেলার অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে, এবং যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একটি রেকর্ড বলে মন্তব্য করেছেন আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন।
ভারতের বরাক নদী দিয়ে আসা ঢলের পানিতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে, যা নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে, ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় জনজীবনে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যদিও এখনো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি। অন্যদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা ৬টার পরিমাপ অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট শহরের কাছেও সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টেও বিপদসীমা ছাড়িয়েছে এবং ফেঞ্চুগঞ্জে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারা মোট চারটি পয়েন্টে (কানাইঘাট, অমলসীদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ) বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন আরও জানান, ২৪ ঘণ্টার এই রেকর্ড বৃষ্টিপাতের পর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আরও প্রায় ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচর, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিসহ বরাক অববাহিকার অন্যান্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণেই মূলত নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
শনিবার থেকে নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, মেজরটিলা, শাহপরান, রিকাবিবাজার, বাগবাড়ী, কালিঘাট এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক ও মহাসড়কে পানি ওঠায় যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।