একটি দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো তার যুবসমাজ। বাংলাদেশে বর্তমানে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ, যা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকাল হিসেবে পরিচিত। এই বিপুল সম্ভাবনাময় যুবশক্তিকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বর্তমানে আমাদের দেশের যুবসমাজের একটি বড় অংশ বেকারত্ব বা অর্ধ-বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। শিক্ষাজীবন শেষ করে কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, যা অনেক সময় তাদের বিপথগামী হতে প্ররোচিত করে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে – প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শ্রমবাজারের চাহিদার অসামঞ্জস্য, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অপ্রতুলতা এবং গুণমানের অভাব, এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাব। ফলে, প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ থাকছে না। ডিগ্রি অর্জনের পরও চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথমত, শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে। তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দিতে হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য করে তুলতে হবে এবং এর মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে, যাতে তরুণরা আধুনিক শ্রমবাজারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে শিল্পায়ন ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিকাশে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, কারণ এই খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে এবং তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং-এর মতো সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে। যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে এই জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধা আমরা হারাবো। তাই, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য একটি সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য।