ডিজিটাল যুগের এই সময়ে স্মার্টফোন, ট্যাব আর কম্পিউটারের পর্দায় আমাদের দৃষ্টি আবদ্ধ। সামাজিক মাধ্যম, ভিডিও গেম আর অনলাইন বিনোদনের ভিড়ে বই পড়ার অভ্যাস অনেকের কাছেই হয়তো সেকেলে মনে হতে পারে। কিন্তু মন ও মননের বিকাশে, জ্ঞানার্জনে এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম, যা কোনো ডিজিটাল মাধ্যম পূরণ করতে পারে না।
বই আমাদের জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন – বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়ে আমরা নতুন নতুন তথ্য জানতে পারি, যা আমাদের চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করে। একটি ভালো বই আমাদের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে, সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে। গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গে আমরা একাত্ম হই, তাদের সুখ-দুঃখ অনুভব করি, যা আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও মানবিকতা বোধ জাগ্রত করে।
নিয়মিত বই পড়লে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়, ভাষার ওপর দখল বাড়ে এবং বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি আমাদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডিজিটাল মাধ্যমে যেখানে তথ্যের প্রবাহ অত্যন্ত দ্রুত, সেখানে একটি বই মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য যে ধৈর্য ও স্থিরতা প্রয়োজন, তা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, বই পড়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি ভালো গল্পের মধ্যে ডুবে গেলে দৈনন্দিন জীবনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যায়।
কীভাবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন? আপনার আগ্রহের বিষয় অনুযায়ী বই নির্বাচন করুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়, এমনকি ১৫-২০ মিনিট হলেও, বই পড়ার জন্য রাখুন। হাতের কাছে সবসময় একটি বই রাখুন, যাতে অবসরে বা যাত্রাপথে পড়তে পারেন। লাইব্রেরিতে যান অথবা বন্ধুদের সঙ্গে বই আদান-প্রদান করুন।
শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বই পড়ে শোনান এবং তাদের বই উপহার দিন। মনে রাখবেন, বই শুধু কাগজের সমষ্টি নয়, এটি জ্ঞানের আলো, যা আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে আলোকিত করে এবং একটি উন্নত ও রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।