শেয়ারবাজার হলো বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় জগৎ আর পুঁজি গঠনের মাধ্যম

LinkedIn
Twitter
Facebook
Telegram
WhatsApp
Email
শেয়ারবাজার হলো বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় জগৎ আর পুঁজি গঠনের মাধ্যম

শেয়ারবাজার বা পুঁজিবাজার এমন একটি সুসংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত বাজার যেখানে বিভিন্ন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার এবং অন্যান্য প্রকার সিকিউরিটিজ, যেমন বন্ড, ডিবেঞ্চার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটসমূহ নিয়মিতভাবে কেনা-বেচা হয়। এই বাজার একদিকে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও স্থিতিশীল পুঁজি সংগ্রহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে সাধারণ জনগণের জন্যও তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জনের একটি আকর্ষণীয় ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।

শেয়ারবাজারে প্রধানত দুই ধরনের বাজার পরিলক্ষিত হয়, যা প্রাথমিক বাজার এবং মাধ্যমিক বাজার নামে পরিচিত। যখন কোনো কোম্পানি প্রথমবারের মতো জনসাধারণের উদ্দেশ্যে শেয়ার ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ করে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বলা হয় এবং এটি প্রাথমিক বাজারের অধীনে সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে, প্রাথমিক বাজারে ইস্যুকৃত শেয়ার যখন পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পারস্পরিকভাবে ক্রয়-বিক্রয় হয়, তখন সেই লেনদেন মাধ্যমিক বাজারে সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের লেনদেনের জন্য প্রধান দুটি সুপ্রতিষ্ঠিত শেয়ারবাজার হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

একটি দেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন কোনো লাভজনক প্রকল্প গ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন অথবা বিদ্যমান ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহে সহায়তা করে। এর ফলস্বরূপ দেশে শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট কোম্পানির আংশিক মালিকানা লাভ করতে পারে এবং কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি ও শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধিজনিত মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পায়। এটি তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎকে অধিকতর সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের শেয়ার ও সিকিউরিটিজসমূহ সহজে কেনা-বেচা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়, যা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থকে প্রয়োজনের সময় দ্রুত নগদ অর্থে রূপান্তর করার সুবিধা প্রদান করে, অর্থাৎ তারল্য সৃষ্টি করে।

শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সূচকের উত্থান-পতন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের জন্য অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ইঙ্গিত সরবরাহ করে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সময়ে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ সহ अनेक নিয়মকানুন ও স্বচ্ছতার নীতি কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়, যা প্রকারান্তরে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করে এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা বাড়ায়।

তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণ, যেমন কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বা অস্থিতিশীলতা, সুদের হারের পরিবর্তন এবং বিশ্ববাজারের প্রবণতা ইত্যাদির প্রভাবে শেয়ারের দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করতে পারে। তাই পর্যাপ্ত জ্ঞান ও বিশ্লেষণ ছাড়া, গুজবের ওপর ভিত্তি করে অথবা অন্যের দেখাদেখি হুজুগে বিনিয়োগ করলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

শেয়ারবাজারে সফলভাবে ও নিরাপদে বিনিয়োগ করার জন্য কিছু মৌলিক বিষয় সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারের পদ্ধতি, বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগের নানা কৌশল সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী অস্বাভাবিক লাভের আশায় ফটকা কারবারে লিপ্ত না হয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। যে সকল কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী, ব্যবস্থাপনা দক্ষ ও দূরদর্শী এবং ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উজ্জ্বল, তেমন ধরনের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বাজারের সাময়িক উত্থান-পতনে অধৈর্য বা আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং ধৈর্য ধারণ করা সফল বিনিয়োগের অন্যতম চাবিকাঠি।

বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, বাজারের স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সার্বিকভাবে বাজারের সুস্থ ও টেকসই বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিশেষে, শেয়ারবাজার একটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক অপরিহার্য অঙ্গ। সঠিক জ্ঞান, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের সাথে বিনিয়োগ করতে পারলে এটি যেমন ব্যক্তির আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হতে পারে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অত্যন্ত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

আরও পড়ুন