কৃষি প্রযুক্তি মানেই খাদ্য নিরাপত্তা আর কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো

LinkedIn
Twitter
Facebook
Telegram
WhatsApp
Email
agricultural technology

কৃষি প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সেই শাখা যা কৃষিকাজের উন্নতি, উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসলের গুণগত মান বাড়ানো এবং কৃষকের শ্রম লাঘব করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি, যন্ত্রপাতি ও কৌশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করে। মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে কৃষিকাজ জীবন ধারণের প্রধান অবলম্বন এবং সময়ের সাথে সাথে কৃষি প্রযুক্তিও পরিবর্তিত ও বিকশিত হয়েছে। আধুনিক যুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্য চাহিদার ক্রমাগত চাপের মুখে টেকসই ও লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কৃষি প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতিতে যেখানে মানুষের কায়িক শ্রম এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা ছিল বেশি, সেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। উচ্চ ফলনশীল বীজ (হাইব্রিড ও জিএমও), রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশকের সঠিক ব্যবহার ফসলের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, যেমন ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিংকলার সিস্টেম, পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং খরাপ্রবণ অঞ্চলেও চাষাবাদ সম্ভব করে তুলেছে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার, থ্রেসারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষিকাজকে সহজ, দ্রুত ও কম শ্রমনির্ভর করেছে।

বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে। প্রিসিশন এগ্রিকালচার বা সুনির্দিষ্ট কৃষি একটি আধুনিক ধারণা, যেখানে সেন্সর, জিপিএস, ড্রোন এবং ডেটা অ্যানালিটিকসের মাধ্যমে জমির উর্বরতা, পানির প্রয়োজন, রোগবালাইয়ের আক্রমণ ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর ফলে সম্পদের অপচয় কমে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস পায়। ভার্টিক্যাল ফার্মিং এবং হাইড্রোপনিক্সের মতো প্রযুক্তি সীমিত জায়গায় মাটি ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসল উৎপাদনে সহায়ক, যা শহরাঞ্চলেও খাদ্য উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

বায়োটেকনোলজি বা জৈবপ্রযুক্তি কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। রোগ প্রতিরোধী, খরা সহনশীল এবং অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হচ্ছে। জিন এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের ডিএনএ-তে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এনে আরও উন্নত জাত তৈরি করা হচ্ছে। কৃষি বর্জ্য থেকে জৈব সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন পরিবেশবান্ধব কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার কৃষকদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বাজারদর, রোগবালাই সংক্রান্ত তথ্য এবং আধুনিক চাষাবাদের কলাকৌশল সম্পর্কে সহজে জানতে সাহায্য করছে।

বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশের জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। সীমিত জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত বীজ, সুষম সার ব্যবহার, সমন্বিত বালাই দমন এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে। তবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য করা এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে, কৃষি প্রযুক্তি কেবল উৎপাদন বৃদ্ধির হাতিয়ার নয়, এটি কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশ সুরক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার যথাযথ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ক্ষুধামুক্ত ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়তে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন