তথ্য প্রযুক্তি বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয় গড়ে তুলেছে ডিজিটাল সমাজ

LinkedIn
Twitter
Facebook
Telegram
WhatsApp
Email
Information technology

তথ্য প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) বলতে বোঝায় তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিনিময় এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সমন্বিত প্রয়োগ। একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনোদন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই এর প্রভাব সুস্পষ্ট। এটি বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করেছে।

তথ্য প্রযুক্তির মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার (যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন, সার্ভার), সফটওয়্যার (যেমন অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম), নেটওয়ার্ক (যেমন ইন্টারনেট, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) এবং ডেটা। ইন্টারনেটের আবিষ্কার তথ্য প্রযুক্তির ইতিহাসে এক মাইলফলক। এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ মুহূর্তের মধ্যে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে, তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে এবং বিভিন্ন অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি যোগাযোগের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি এনেছে অভাবনীয় গতিশীলতা। ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে ঘরে বসেই পণ্য ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম আর্থিক লেনদেনকে করেছে সহজ ও নিরাপদ। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডেটা ও অ্যাপ্লিকেশন সহজে সংরক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারছে। ডেটা অ্যানালিটিকস এবং বিগ ডেটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও তথ্যভিত্তিক ও কার্যকর হচ্ছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল লাইব্রেরি, শিক্ষামূলক অ্যাপস এবং ইন্টারেক্টিভ মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট জ্ঞান অর্জনকে আরও সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দূরশিক্ষণ বা ডিসটেন্স লার্নিংয়ের মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় টেলিমেডিসিন, ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডস এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সফটওয়্যার রোগীর সেবা প্রাপ্তিকে উন্নত করেছে।

সরকারি সেবা প্রদানেও তথ্য প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ই-গভর্নেন্স বা ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সেবা (যেমন নাগরিক সনদ, জমির পর্চা, পাসপোর্ট আবেদন) অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, যা দুর্নীতি হ্রাস এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিনোদন শিল্পেও তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়, যেমন অনলাইন গেমিং, স্ট্রিমিং সার্ভিস এবং ডিজিটাল আর্ট।

তবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। হ্যাকিং, ডেটা চুরি, ম্যালওয়্যার আক্রমণ এবং অনলাইন প্রতারণা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তথ্যের অতি প্রবাহ এবং ভুল তথ্যের (মিসইনফরমেশন) বিস্তারও একটি সমস্যা। ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। ডিজিটাল বৈষম্য, অর্থাৎ সকলের জন্য প্রযুক্তির সমান সুযোগ না থাকাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তার, ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার শিল্প এবং আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠা এই খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

পরিশেষে, তথ্য প্রযুক্তি আধুনিক সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সঠিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন থেকে একটি সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনে আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।

আরও পড়ুন